দুই জীবন সিনেমার রবিনের কথা মনে আছে? অনবদ্য অভিনয় করে দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। এরপর ‘নতুন বউ’, ‘পালাবি কোথায়’ ছবিতে চমৎকার অভিনয়ের মাধ্যমে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়। বাংলা চলচ্চিত্র জগতের এমনই এক কিংবদন্তি তারকা আফজাল হোসেন।
বাংলা টিভি নাটকের প্রথম সুপারস্টার বলা হয় আফজালকে। যিনি দেখিয়েছিলেন, টিভি নাটকের অভিনেতারাও ব্যক্তিত্ব আর আভিজাত্যে সিনেমার নায়কদের চেয়ে কম নন। আফজাল তরুণদের জন্য যেমন ছিলেন ফ্যাশন আউডল, তেমনই তরুণীদের স্বপ্নপুরুষ।
অভিনেতার পাশাপাশি আফজাল হোসেন একাধারে একজন পরিচালক, চিত্রশিল্পী, বিজ্ঞাপন নির্মাতা এবং লেখক। ১৯৫৪ সালের ১৯ জুলাই তৎকালীন পূর্ব বাংলার সাতক্ষীরার পারুলিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। শিল্পকলার অভিনয় শাখায় তার অবদানের জন্য ২০২২ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করেন।
কিন্তু জানেন কি, গুণী এই অভিনেতার জীবনের লক্ষ্য এমনটা ছিল না। অভিনেতা হওয়ার স্বপ্নও ছিল না আফজালের। গ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছিলেন ছবি আঁকতে। ঢাকা আর্ট কলেজে পড়ে শিল্পী হবেন এমন স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু তার জীবনের মোড় ঘুরে গেল ১৯৭৪ সালে।
চলচ্চিত্র পরিচালক নাসিরউদ্দিন ইউসুফের হাত ধরেই মঞ্চে অভিনয় শুরু করেন আফজাল। মূলত তার প্রেরণাতেই থিয়েটারে যোগ দেন বলে নিজের ফেসবুকে অকপট স্বীকারক্তি এই অভিনেতার। নাসিরউদ্দিন ইউসুফের কারণেই নাটক, অভিনয়, অভিনয়শিল্পীর মতো গৌরবময় অধ্যায়, পরিচয় আফজালের জীবনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।
সেই থেকেই অভিনয়ের প্রেমে পড়ে যান তিনি। ক্রমেই অভিনয় হয়ে ওঠে তার আনন্দের, গৌরবের একনিষ্ঠ জায়গা। মঞ্চে আফজালের প্রতিভা বিকশিত হতে বেশি সময় লাগেনি। ঐতিহাসিক চরিত্র আওরঙ্গজেব চরিত্রে দেখা গেছে তাকে, অভিনয় করেছেন এই সেই কণ্ঠস্বর, একটি যুদ্ধ অন্য একটি মেয়ে, সুখের ছাড়পত্র, বাবার কলম কোথায়, তুমি, নিলয় না জানি, প্রচ্ছায়া, বহুব্রীহি, চেহারাসহ অসংখ্য জনপ্রিয় নাটকে। নব্বইয়ের দশকে অনেক জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনই আফজালের হাতে গড়া। ছবির মত মেয়ে, মন ময়ূরীর মতো জনপ্রিয় কিছু নাটকে নির্মাতা তিনি।
তবে জীবনে তিনি প্রভাব-প্রতিপত্তি কিছুই চাননি। আফজাল বলেন, ‘বড়’ হতে চাননি, ‘বিশেষ’ হতে চাননি, এমনকি তিনি কিছুই হতে চাননি। হিন্দি ছবির নায়িকার পেছনে নৃত্যরতা ৯৯ জন নারীর মতো একঝাঁক মানুষের দলে থাকতে চেয়েছেন তিনি। তার বিশ্বাস, একজন হতে গিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য প্রাপ্তি থেকে মানুষ দূরে সরে যায়।