কতই না মজাদার, স্মৃতিময় কেটেছে আমাদের শৈশবকাল। কাবাডি, গোল্লাছুট, লুকোচুরি, নৌকাবাইচ, বদন, ঘুড়ি ওড়ানো ইত্যাদিসহ কত রকম খেলা নানা নামে পরিচিত বিভিন্ন গ্রামে, অঞ্চলে। এছাড়াও সময় কাটানোর মতো কত্তো মজাদার মাধ্যম ছিল! দাদা-দাদির কাছে রাতের বেলা বসে পরিবারের সবাই দেও-পরীদের গল্প শুনতাম। দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের ঠাকুমার ঝুলি, আলিফ লায়লা তো ছিলই। এসব বিনোদন শিশুদের দৈহিক, মানসিক বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা রাখত। সবচেয়ে বড় কথা হলো—এসব সুস্থ বিনোদন পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করে তুলত, প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টি করত নিবিড়ভাবে।
দুঃখের বিষয় হলো, এসব বিনোদনের স্থলে আজকের দিনে জায়গা করে নিয়েছে ভিডিও গেম ও সামাজিক মাধ্যমগুলোতে অপরিমিত আসক্তি, যা আমাদের তরুণসমাজ ও শিশুদের দেহ-মনের ওপর হুমকি। সারা বিশ্ব জুড়েই এসব মাধ্যমের নানা ক্ষতিকারক দিক নিয়ে গবেষণা চলছে। কতিপয় গেম অতিমাত্রায় খেললে মস্তিষ্কে ক্ষতিকর হরমোন ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এসব ভিডিও গেম, ভিনদেশি কার্টুন ছবি আমাদের বাচ্চাদের নিজ ঐতিহ্য থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। আরো একটি কারণ পরিবেশ ও পর্যাপ্ত উপকরণের অভাব। অসুস্থ প্রতিযোগিতা আমাদের শিশুদের শৈশব থেকে মধুর দিনগুলোকে সরিয়ে দিচ্ছে।
আমরা যেন মৌলিক পরিচয় হারিয়ে না ফেলি সেদিকে লক্ষ রাখার সময় এখনই। কিভাবে কাবাডি খেলে সেটা বেশিরভাগ শিশু-কিশোর জানে না। অনেকেই জানে না কিভাবে গোল্লাছুট, লুকোচুরি খেলতে হয়। তাদের মাথায় ঢুকে থাকে ইংরেজি মুভি, গান ইত্যাদি। আমাদের কিশোররা রবীন্দ্রসংগীত, দেশাত্মবোধক গান শুনলে চিনতে পারে না, জানে না বাংলার জীবনধারণ-প্রকৃতি! এসবের পিছনে দায়ী আমাদের সমাজব্যবস্থা, অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও আধুনিক অভিভাবকসমাজ! তারা বাচ্চাদের রাজা-রানির গল্প শোনান না। মরিয়া হয়ে ওঠেন তাদের রাতারাতি শেক্সপিয়র, আইনস্টাইন তৈরি করতে। এখনকার খুব কম শিশুই বই পড়ে।
আমাদের শিশুদের পরিচয় করিয়ে দিন নিজ দেশের আসল জীবনধারার সঙ্গে। তাহলে আবার হয়তো তাদের দেখা যাবে লুকোচুরির আনন্দে, আবার দেখা যাবে রাতের বেলা দাদির পাশে গোল হয়ে বসে ডালিমকুমারের গল্প শুনতে।