ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪

কোট

নির্মাণের দুই বছর পর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হচ্ছে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল (পিসিটি)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী মঙ্গলবার ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি পণ্য উঠানামার গুরুত্বপূর্ণ এই টার্মিনাল উদ্বোধন করবেন। প্রধানমন্ত্রী টার্মিনাল উদ্বোধনের পর এ বিষয়ে রেড সি কর্তৃ সঙ্গে চুক্তি হবে। কর্ণফুলী নদীর পাড়ে নির্মিত এই টার্মিনাল পরিচালনা করবে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান ‘রেড সি গেইটওয়ে’। প্রধানমন্ত্রী টার্মিনাল উদ্বোধনের পর এ বিষয়ে রেড সি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি হবে। এর মধ্য দিয়ে দেশের সমুদ্রবন্দরের টার্মিনাল পরিচালনায় প্রথম কোনও বিদেশি প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম ড্রাইডকের পর এবং চট্টগ্রাম বোট ক্লাবের আগে বন্দরের প্রাইম লোকেশনে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের অবস্থান। বন্দরের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। এই টার্মিনালে সব যন্ত্রপাতি যোগ হলে বছরে সাড়ে চার লাখ একক কন্টেইনার ওঠানামা করা সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক : ভয়াল ১২ নভেম্বর আজ। ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর রাতে ঘূর্ণিঝড় ‘হেরিকেন’ সর্বোচ্চ ২৫০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হেনেছিলো উপকূলীয় জেলাগুলোতে। ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের তোড়ের সঙ্গে ৩০ ফুট জলোচ্ছ্বাস ভাসিয়ে নেয় সব কিছুই।

পাকিস্তান সরকারের হিসেবে এই ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসে উপকূলের ৫ লাখ মানুষ মারা যায়। তবে বাস্তবে এই সংখ্যা দ্বিগুনের বেশি। সে রাতে নিখোঁজই হয়েছিলেন প্রায় আড়াই লাখ মানুষ, যাদের আর সন্ধান মেলেনি। বরগুনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পিরোজপুরসহ উপকূলের ৭১০ কিলোমিটার এলাকায় বসবাসরত পরিবারগুলোর কোন না কোন সদস্য নিহত বা নিখোঁজ হয়েছিলেন।

ঘূর্ণিঝড়ের পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মাওলানা ভাসানী উপকূলের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে ছুটে আসেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে ত্রাণ ও উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেন দুই নেতা। পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক শাসক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শনে এসেছিলো দুর্যোগের ১০ দিন পর।

প্রধানমন্ত্রী টার্মিনাল উদ্বোধনের পর এ বিষয়ে রেড সি কর্তৃ সঙ্গে চুক্তি হবে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা ও বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, ১৯৭০ সালের ১১ নভেম্বর বুধবার সকাল থেকেই গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হতে থাকে। পরদিন ১২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার আবহাওয়া আরও খারাপ হতে শুরু করে। মধ্যরাত থেকেই ফুঁসতে থাকে সমুদ্র। লোকালয়ের আছড়ে পড়ে একের পর এক উঁচু ঢেউ। মুহূর্তেই ভাসিয়ে নিয়ে যায় মানুষ, গবাদি পশু, বাড়ি-ঘর। তলিয়ে যায় মাঠের ফসল, রাস্তা-ঘাট। পরদিন পথে প্রান্তরে খোলা আকাশের নীচে দেখা যায় শুধু লাশ আর লাশ। গোটা উপকূল পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে।

জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা ১৯৭০ এর ঘূর্ণিঝড়কে ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর প্রলয়ংঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে উল্লেখ করেছে। উপকূলে আঘাত হানার সময়ে ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিলো ২৫০ কিলোমিটার। ১২ নভেম্বর সন্ধ্যা থেকে ১৩ নভেম্বর ভোর পর্যন্ত এর বাতাসের গড় গতিবেগ ছিলো ১৮৫ কিলোমিটার।

প্রধানমন্ত্রী টার্মিনাল উদ্বোধনের পর এ বিষয়ে রেড সি কর্তৃ সঙ্গে চুক্তি হবে।

২০২২ সালের ১৮ মে জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা বিশ্বের প্রলয়ংঙ্কারী পাঁচ ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগের তালিকা প্রকাশ করে। এই তালিকার শীর্ষে আছে ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর উপকূলীয় অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘হেরিকেন’। এতে বলা হয়, ১২ নভেম্বর সন্ধ্যা থেকে ১৩ নভেম্বর ভোর সর্বকালের ভয়াবহ প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানে। সরকারি হিসেবে এতে ৩ থেকে ৫ লাখ মানুষ মারা যান; তবে বেসরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। ঘূর্ণিঝড়ের পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মাওলানা ভাসানী উপকূলের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে ছুটে আসেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে ত্রাণ ও উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেন দুই নেতা। পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক শাসক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শনে এসেছিলো দুর্যোগের ১০ দিন পর।

নভেম্বর এলেই উপকূলীয় এলাকার মানুষ আতঙ্কে থাকেন। ১৯৭০ এর ১২ নভেম্বরের মতো ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে আঘাত হানা আরেক ঘূর্ণিঝড়, সুপার সাইক্লোন খ্যাত ‘সিডর’। বঙ্গোপসাগর থেকে বিশাল জলোচ্ছ্বাস মাথায় করে প্রায় ২২০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে বরিশাল, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনা ও পিরোজপুরের বিশাল এলাকায়। সিডরের তান্ডবে উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক প্রাণহাণী ও সম্পদ নষ্ট হয়; সেই দুর্বিষহ স্মৃতি এখনো বয়ে বেড়ায় উপকূলের মানুষ।

Scroll to Top