ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪

নারী, তুমি কন্যা-জায়া-জননী

জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে সৌন্দর্য আলাদা, রয়েছে আলাদা গুরুত্বও। সেসব অবস্থানে নারীদের রূপও হয় আলাদা। নারী কখনো হয় কন্যা, কখনো জায়া, আবার কখনো হোন জননী। নারীর যেন ত্রিভূবনজয়ী সত্তা। প্রথমে কারো কন্যা হয়ে বেড়ে উঠে নারী, এরপর পরিচয় পান কারো স্ত্রী রূপে। এরপর জীবনের পূর্ণতা নিয়ে হোন কারো জননী। পূর্ণাঙ্গ রূপে নারীর পরিচয় মেলে আরও কয়েকটি ধাপে। এর বাইরে কখনো সে প্রেমিকা, কখনো-বা ছেলের বউয়ের মা, মানে শাশুড়ি। এতো সব পরিচয়ের ভিড়ে আত্মপরিচয় কী খুঁজে পান একজন নারী!

কন্যা তুমিভগিনী তুমি

মানুষ হয়ে জন্মায়, অথচ কন্যা হয়ে বাঁচতে শেখায় সমাজ। মানুষের ভিড়ে তাকে তিলে তিলে মনে করিয়ে দেয়, তুমি কন্যা; তুমি এটা পারবে না, ওটা করবে না। এটা করা তোমার সাজে না, ওটা করা তোমার মানায় না। এমন হাজারো প্রতিবন্ধকতা এসে শেকল পরায় পায়ের বেড়িতে। তুমি অমুকের মেয়ে, তুমি তমুকের বোন। তার মানে, পুরুষের পরিচয়ে তুমি পরিচিত হও। তোমার নিজস্ব পরিচয় যেন থাকতে নেই। তোমার একমাত্র পরিচয়, তুমি কন্যা। ভ্রুণেই তোমাকে হত্যা করে এমন হাজারও সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলেছে পুরুষ। অথচ সেই পুরুষের পরিচয়ে তোমাকে জীবনের শুরুতেই পরিচিত হয়ে থাকতে হবে, থাকতে হয়।

জায়ার কাঁধে সংসারের জোয়াল

জায়া হওয়ায় হঠাৎ বেড়ে যায় অলিখিত দায়িত্ব। এমন হঠাৎ কাঁধের ওপর জোয়াল এসে পড়ায় বদলে যায় জীবন। চাইলেও কোথাও বেড়াতে যেতে পারেন না, নিজের মতো কেটাকাটা পারেন না। নিজের খাওয়া-দাওয়া, ঘুম কিছুই আর রুটিনমাফিক হয় না। সংসারকেই তখন মনে হয় তার সবচেয়ে বড় আশ্রয়স্থল।

মাতৃত্ব এক অলীক অনুভূতি

মাতৃত্ব নারীর জীবনের একটা মাইলফলক। যত্নে-ভালোবাসায়, আদরে যে প্রাণ নিজের মধ্যে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে, তাকে বড় করে তোলার আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার নয়। তার হাসি, বায়নার কান্না, অভিমান— সব অনুভূতি মিলিয়েই তৈরি হয় মায়ের সঙ্গে এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। নবজাতকের জন্মের সঙ্গে সঙ্গে একজন নারীর নতুন করে জন্ম হয়। একদিকে শারীরিক পরিবর্তনের সঙ্গে যেমন মানিয়ে নিতে হয়, অন্যদিকে সন্তানের দায়িত্ব সামলানোর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হয় মানসিকভাবে।

নারীর জীবনে সন্তান বয়ে নিয়ে আসে এক আমূল পরিবর্তন। তখন জীবনের কেন্দ্রবিন্দুতেই থাকে তার সন্তান। নিজের জন্য সময় পাওয়া খুব কঠিন হয়ে যায় তখন। এমনকি সন্তান জন্ম দেওয়ার পর নারীর হতে পারে মানসিক সমস্যা। সন্তান জন্মানোর ছয় মাস পরেও মায়ের হতে পারে গভীর বিষণ্নতা।  এর জন্য দায়ী শারীরিক পরিবর্তন। কিন্তু পরিবারের কাছের মানুষেরাও অনেক সময় বুঝতে পারেন না সন্তান হওয়ার মতো একটা খুশির ব্যাপারে মায়ের কেন কান্না পায়, কেন মন খারাপ হয়? এ যেন এক অলীক সুখ!

Scroll to Top