ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪

ফ্রিল্যান্সিংয়ে কোটিপতি!

শাহিনুর রহমান। ২৪ বছরের টগবগে যুবক। সফল ফ্রিল্যান্সার। একাগ্র চেষ্টা, মেধা ও কঠোর পরিশ্রমে নিজেকে সবার কাছে পরিচিত করে তুলেছেন।

শাহীনুর এখন অনেকের কাছেই পরিচিত নাম। দেশের ফ্রিল্যান্সারদের আইকন। তার এই সফলতা কিন্তু একদিনে আসেনি।

পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের বড়দাপ গ্রাম। গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়বে এক সুরম্য অট্টালিকা, এটাই শাহীনুরের বাড়ি।

মাত্র বছরদুয়েকের ফ্রিল্যান্সিংয়ের আয় দিয়ে গড়ে তুলেছেন এই অট্টালিকা। অথচ কিস্তিতে কেনা ল্যাপটপ দিয়ে শুরু করেছিলেন ফ্রিল্যান্সিং। এখন তাকে কোটিপতিও বলা যায়।

কৃষক পরিবারের সন্তান। ছোটবেলাটা মোটেও সুখের ছিলনা শাহীনুরের। পড়ার খরচটা পর্যন্ত চালানোর সামর্থ ছিলনা বাবা দবিরুল ইসলাম ও মা রহিমা বেগমের।
মেধাবী হলেও লেখাপড়ায় অমনোযোগী ছিলেন। বাবার সাথে মাঠের কাজেও অনীহা ছিল। এজন্য বাবার হাতে মারও খেতে হয়েছে।

লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম, বাধ্য হন বড়বোন ও দুলাভাইয়ের আশ্রয়ে চলে যেতে। সেখানেও বিপত্তি। হঠাৎ করেই মারা যান দুলাভাই। বোনের পরিবারের দায়িত্বও চাপে তার ঘাড়ে। পিছু হটেননি শাহীনুর।

টিউশনি, টুকটাক কাজ, এই করে পড়ার খরচ চালাতেন। ভাবনা একটাই, যে করেই হোক স্বাবলম্বী হতে হবে। পলিটেকনিকে পড়ার সময় ফ্রিল্যান্সিংয়ের চিন্তা মাথায় আসে।

এজন্য দরকার একটা ল্যাপটপ। কোথায় পাবেন সেই ল্যাপটপ। অনেক দেনদরবার, মান অভিমান। নাছোড় শাহীনুর। অবশেষে কিস্তিতে কেনা হয় ল্যাপটপ।

ল্যাপটপতো হল! তারপর! নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে কাজ শেখেন। তারপরও কত বাধা। একটা কাজের জন্য দিনের পর দিন, রাতের পর রাত অপেক্ষা! হতাশা গ্রাস করে, আবার ঘুরে দাঁড়ায়। এভাবেই এক সময় কাজ পেতে শুরু করেন।

শাহিনূরের স্বপ্ন ছিল প্রকৌশলী হওয়ার। আর আজ! শুধু ফ্রিল্যান্সিং নয়, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন শাহীনুর।

এক সময় ঢাকায় কিছুদিন চাকরিও করেছেন। এখন ঘরে বসেই মাসে আয় করছেন দুই থেকে তিন লাখ টাকা। কোনকোন মাসে আরও বেশি। পাঁচ লাখও ছাড়িয়ে যায় কোনো মাসে।

আটোয়ারিতেই গড়ে তুলেছেন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ট্রেনিং সেন্টার। সেখান থেকে ট্রেনিং নিয়ে অনেকেই স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখছেন।

যারা নতুন ফ্রিল্যান্সার হতে চান, তাদের প্রতি পরামর্শ কি?

শাহীনুর জানান, অনেক সময় নতুনরা ইউটিউবে বিজ্ঞাপন দেখে প্রতারকের খপ্পরে পড়েন। এতে অনেকের মনোবল নষ্ট হয়ে যায়। ভালো প্ল্যাটফর্ম থেকে কাজ শিখতে পারলে ভবিষ্যত উজ্জল।

তবে পরিশ্রম আর ধৈর্য্যের কোন বিকল্প নেই, জানান শাহীনুর। আজ শাহীনুরকে নিয়ে গর্বিত তার বাবা-মা।
অ্যাডভোকেট ফরহাদ, শাহীনুরের প্রতিবেশি। তিনি বলেন, এতো অল্প বয়সে এরকম সাফল্য! ভাবা যায়!

স্থানীয় প্রশাসনও ভাবছে শাহীনুরকে নিয়ে। নতুন কিছু করা যায় কিনা, সে চিন্তাও আছে তাদের।

ইমরান রাজু, টিম রুটস. পঞ্চগড়
Scroll to Top