ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪

বাংলাদেশের বাইরে প্রথম শহিদ মিনার

বাংলাদেশ, মাতৃভাষার সাথে মিল রেখে দেশের নামকরণ। ভাষার প্রতি কি বিনম্র শ্রদ্ধা! নিজের ভাষায়, মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সালাম, বরকত, রফিক ,জব্বারসহ আরো নাম না জানা অনেক ভাইয়ের প্রাণ বিসর্জন দেওয়ার ইতিহাস সবারই জানা।

পৃথিবীতে এ এক বিরল দৃষ্টান্ত। আর তাইতো বাংলাদেশিরা পৃথিবীর যে যেই প্রান্তেই থাকুক না কেন ভুলতে পারেনা নাড়ীর টান, শিকরের টান, দেশমাতৃকার কথা। ক্ষণে ক্ষণে মনে পরে সেই ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় ছোট ছোট গ্রামগুলির কথা।

ইংরেজী ভাষা-ভাষীর এই দেশে সারাদিনের কর্মব্যস্ততায় হয়ত একটা বাংলা শব্দও ব্যবহারের সুযোগ যেখানে কদাচিৎ, সেখানে দিন শেষে ঘরে ফিরে নিজের ছোট্ট শিশুটিকে ‘মা’ বলে ডাকার মধ্যেই যেন খুঁজে পাওয়া যায় সকল পার্থিব সুখ।

বিশ্বের যেসব দেশে বাঙালিরা অভিবাসী হিসেবে নোঙর গেড়েছে তার মধ্যে নি:সন্দেহে বিলেত অন্যতম। বিলেতে বাঙালিদের অগ্রযাত্রা খুবই সম্ভাবনাময়। বিলেতে বাঙালির ইতিহাস শুরুর দিকে যতটা না কষ্টের আবরণে ঘেরা ছিল ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য ততটাই আলোকিত। বৃটেনের লন্ডন এবং বার্মিংহামের পরেই যে শহরে সবচেয়ে বেশি বাঙালির বসবাস সেটা নি:সন্দেহে ওল্ডহ্যাম।

এখানে প্রায় বিশ হাজার বৃটিশ-বাংলাদেশি স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। এখানে বাংলাদেশিদের পদচারণা বেশ পুরনো। এখানকার রাস্তা-ঘাট, দোকানপাটগুলোতে বাঙালিদের আনাগোনা দেখে প্রায়শ:ই মনে হতে পারে এ যেন প্রবাসে একখণ্ড বাংলাদেশ। ভাগ্যান্বেষণে বাঙালিরা একদিন জাহাজে করে এখানে এসে গড়ে তুলেছেন স্থায়ী বসতি। যা ইতিমধ্যেই দ্বিতীয় পেরিয়ে তৃতীয় প্রজন্মে পদার্পণ করেছে।

ওল্ডহ্যাম, ইংল্যান্ডের নর্থওয়েস্টের একটি ঐতিহ্যবাহী শহর। একসময় শিল্প এলাকা হিসেবে বেশ খ্যাতি ছিল এই ছোট্ট শহরটির। কিন্তু বর্তমানে সবকিছুকে ছাপিয়ে শহরটি বাংলাদেশিদের কাছে এক ঐতিহাসিক ঘটনার নীরব সাক্ষী। ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার জন্য আত্মদানকারী শহীদদের স্মরণে এই ওল্ডহ্যাম শহরেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বাংলাদেশের কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারের আদলে দেশের বাইরে প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে নির্মিত ওল্ডহ্যামের এই স্থায়ী শহীদ মিনারটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৯৬ সালে এবং ১৯৯৭ সালে তা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। যা কিনা আমাদের জানা মতে- বাংলাদেশের বাইরে স্থায়ীভাবে নির্মিত প্রথম শহীদ মিনার।

আর বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে বিদেশে নির্মিত প্রথম শহিদ মিনারটি অবস্থিত জাপানের রাজধানী টোকিও – এর ইকেবুকুরো নিশিগুচি পার্কে।

Scroll to Top