বাগেরহাটের ফকিরহাট সদরের কাঠতলায় থাকেন ময়না বেগম। এলাকার সবাই তাকে হেডমিস্ত্রি বা ময়না ওস্তাগার বলে চেনে।
বরগুনার আগাপদ্মা এলাকায় জন্ম ময়না বেগমের। প্রথম স্বামীর মৃত্যুর পরে বাগেরহাটের রতন চৌকিদারের সাথে দ্বিতীয় বিয়ে হয়। সেই থেকে ময়না বাগেরহাটে।
ময়না বেগমের হেডমিস্ত্রি বা ওস্তাগার হয়ে ওঠার গল্পটা একদিনের নয়। দীর্ঘ ২৫ বছরের।
সংসারের অভাব ফেরাতে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ শুরু করেন। এক সময় মতলেব ওস্তাগারের সাথে পরিচয় হয়। মোড় ঘুরে যায় তার।
দিন কাটে, নির্মাণ কাজের সব মাপজোক, হিসাব-নিকাষ শিখে নেন। মতলেব ওস্তাগারকে ওস্তাদ মানেন ময়না।
এখন ইমারত তৈরীর কারিগর হিসাবে উপজেলা জুড়ে জনপ্রিয় ময়না মিস্ত্রি। খুবই ব্যস্ত থাকেন। তার সিডিউল মেলেনা অনেক সময়, জানান শেখ শহীদুল ইসলাম। এলাকার জনপ্রতিনিধি তিনি।
ময়নাও হাসিমুখে স্বীকার করেন, ম্যালা কাম, মানষেরে কথা দিয়া ঘুরাইয়া লাভ কী।
এলাকার অসংখ্য বাড়ির ইটের গাঁথুনিতে ময়না মিস্ত্রির হাতের ছোয়া। ঢালাই, গাঁথুনি, সেন্টারিং, প্লাস্টারিং সবই করেন নিজে। জোগালি হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। এখন তিনি দক্ষ কারিগর। তার দলে ১৮ থেকে ২০ জন নির্মাণ শ্রমিক কাজ করেন।
এদের বেশিরভাগই নারী শ্রমিক।
সমান কাজ করেও শুধুমাত্র নারী হওয়ার কারণে কখনো পুরুষের সমান মজুরি পান নি। নিজে সহকর্মীদের কাজের ভিত্তিতে মজুরি দেন। নারী-পুরুষ বিবেচনা করেন না। এলাকার সবারই তার উপর ভরসা।
এখন পর্যন্ত বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। কাজের সময় খুব সতর্ক থাকেন তিনি।
এক সময় নানা সমালোচনা সহ্য করেছেন। সেসবে পাত্তা না দিয়ে কাজ করে গেছেন। এখন সম্মান দেন, সমীহ করেন অনেকে। এই সুনামটাই ধরে রাখতে চান হেডমিস্ত্রি ময়না বেগম।