মোড়ের মাথায় আলোকস্তম্ভে আটকে থাকা ছেঁড়া ঘুড়িটা আপন ছন্দে হাওয়ায় পাক খেতে থাকে। বর্ষার জল পেয়ে কার্নিশে গজিয়ে ওঠা আগাছা মনের সুখে আকাশপানে হাত মেলেছে। অপরিসর রাস্তায় টানা রিকশা আর সাইকেল ভ্যানের যানজট, পথচলতি মানুষের বিরক্তি আর নতুন কাগজের সেই গন্ধ ধরে রেখেছে আমাদের পাড়ার নিজস্ব চরিত্রটা। পাড়ার নাম বুদ্ধু ওস্তাগর লেন। ঘিঞ্জি পাড়াটা ঝাঁ-চকচকে নয়, এর আকর্ষণ লুকিয়ে সম্পর্কের উষ্ণতায় আর জীবনযাত্রার বৈচিত্রে।
শোনা যায়, বুদ্ধু ওস্তাগর ছিলেন রাজমিস্ত্রি। তাঁর নামেই এই রাস্তা। কালী সোম স্ট্রিট থেকে শুরু হয়ে বুদ্ধু ওস্তাগর লেন মিশেছে সূর্য সেন স্ট্রিটে। পাশে এক দিকে, বৈঠকখানা রোড। অন্য দিকে, অ্যান্টনি বাগান লেন।
আজকের পাড়াটা ঘিঞ্জি, কোলাহলময়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে ব্যস্ততা। অপরিসর রাস্তা এবং যানজটের কারণে এ পাড়ায় হাঁটাচলার স্বাচ্ছন্দ্য নেই। এক দিকে দোকানের সামনে যানবাহনের পার্কিং, বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ি এবং পথচলতি মানুষের যাতায়াতের ফলে মাঝেমধ্যেই তৈরি হয় যানজট। বাণিজ্যিক কারণে এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলেও হারিয়েছে পাড়া-পাড়া সেই আবহাওয়াটা। তবু হারায়নি মানুষে মানুষে সুসম্পর্ক আর যোগাযোগ। বাড়িতে ভাল কিছু রান্না হলে যেমন প্রতিবেশীদের বাড়িতে তা পাঠানো হয়, তেমনই যে কোনও উৎসব-অনুষ্ঠানে তাঁদের নিমন্ত্রণ করার অভ্যাসটাও আছে।
পাড়ার সকালটা শুরু হয় ভোরের আজানের সুরে। বেলা যত বাড়ে, বাড়তে থাকে কোলাহল। শোনা যায় হরেক ফেরিওয়ালার ডাক। শিল কাটাই, চাবিওয়ালার ছন-ছনানি, ছাতা সারাই ডাক মিশে আছে সকালের ছবিতে। বিকেলে ঘটিগরম, চানাচুর ইত্যাদি আছে পরপর।
এখানেও উন্নত নাগরিক পরিষেবা মিলছে। রয়েছে পর্যাপ্ত আলো এবং জলের জোগান। নিয়মিত দু’বার করে রাস্তা পরিষ্কার করা হলেও কিছু মানুষের নাগরিক সচেতনতার অভাবে সব সময়ে পাড়াটা পরিচ্ছন্ন থাকে না। রাত যত বাড়ে, যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাড়ে আবর্জনাও। রাস্তার ধারে দেওয়ালগুলো পানের পিকে রঞ্জিত। আগে বর্ষায় জল জমলেও এখন তা তাড়াতাড়ি নেমে যায়। পাড়ায় আরও এক সমস্যা পার্কিং। যাঁদের গাড়ি আছে জায়গা না থাকায় তাঁদের পাড়ার বাইরে কাছাকাছি রাখতে হয়। তবুও বলব আমাদের পাড়াটা সুরক্ষিত এবং নিরাপদ। নেই কোনও ঝুট-ঝামেলা।