এ শহর আমার প্রাণের শহর ভালোবাসার শহর। শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি ও সৃজনশীল চর্চার চারণ ক্ষেত্র এবং শিক্ষাদীক্ষা, নদনদী আর দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের প্রগাঢ় ভালবাসায় এই শহরেই কাটিয়েছি জীবনের মূল্যবান কিছু সময়। আনন্দমোহন কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে এ পড়ার সুবাদে আমার এই ময়মনসিংহ শহরের প্রেমে পরা। এখন পর্যন্ত এই শহরের সাথে ব্রেকআপ হয়নি আমার।
আনন্দমোহন ক্যাম্পাসে আমার রয়েছে অনেক হাসি আনন্দ ও বেদনার স্মৃতি। ক্লাসের ফাঁকে বন্ধুদের নিয়ে ক্যাম্পাসের কৃষঞচুড়া চত্বরে চলতো সমসামায়িক রাজনৈতিক আলোচনা, কবিতা, গল্প আর গানের আসর।
মাত্র দু’বছর সময় অথচ এখনো মনে গেথে আছে কলেজ রোড, কাচিঝুলি, গুলকিবাড়ী মোড়, সানকিপাড়া, আকুয়া মাদ্রাসা কোয়ার্টার, লিচুবাগান, সেনবাড়ী, গোহাইলকান্দি, টাউনহল, গাংগিনার পাড়,সিকে ঘোষ রোড, নতুনবাজার,চরপাড়া, নওমহল, মাসকান্দা, জয়নাল আবেদীন পার্ক, কতশত স্মৃতিময় এলাকা ।
আমার সবচেয়ে ভাললাগার বিষয় হলো ময়মনসিংহ মানুষের সিমপ্লিসিটি আর আন্তরিকতা। এরা মানুষের সাথে খুব সহজে মিশে যেতে পারে। এদের স্বকীয়তা বজায় রাখার যে প্রবণতা, তা বেশ ভালো লাগে।কি দিয়া খাইছুইন! কিরম আছুইন! আহ! সেরম ভাষা তো আছেই।
সে বয়সে আমার কাছে ময়মনসিংহকে মনে হতো ছবির মতো একটা শহর! অথচ এখন অচেনা মনে হয়। দেখতে দেখতে কেমন যেন ধূসর হয়ে গেল। ময়মনসিংহ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। অথচ নীতিনির্ধারণী কারুরই যেন পরিকল্পিত শহর গড়ে তোলার কোনো চিন্তা নেই। শহরজুড়ে সর্বত্র একধরনের অরাজকতা, মনে হয় সংকট দিন দিন মাত্রা ছাড়াচ্ছে। চিকিৎসা আর শিক্ষার নামে কেবল অবাধ বাণিজ্যের শহরে রূপ নিয়েছে। যে যত ভাবেই উন্নয়নের কথাই বলুক না কেন শহরের চেহারা কিন্তু এর সাক্ষী দেয় না। অথচ পাশ্ববর্তি ছোট জেলা শহর জামালপুর এর রূপ রস জৌলুস তরতর করে উপরে উঠছে তো উঠছেই! উন্নত দেশে কৃত্রিম লেক বানিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করে শহরকে গোছানোর নজির অনেক। কিন্তু ময়মনসিংহ শহরের প্রায় বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া ‘ব্রহ্মপুত্র’ এখন ধুকে ধুকে মৃত্যুর মুখে।
ময়মনসিংহ শহর আমাদের সবার ভাললাগার ভালবাসার শহর!
সকল সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের চর্চা কেন্দ্র হিসেবে ময়মনসিংহের যে বিরাট ঐতিহ্য সুবিশাল পরিচিতি রয়েছে তা অটুট রাখুক অক্ষয় থাকুক।