ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪

আমিই ঠেকালাম আমার বিয়ে

বাবা চা দোকানি, মা মুড়ির কারখানায় কাজ করেন। দরিদ্র হওয়ায় বিয়ে ঠিক করেছিল পরিবার। নিজের বিয়ে ঠেকাতে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় হাজির দশম শ্রেণির ছাত্রী বর্ষা। তার মুখেই শোনা যাক সেই গল্প

আমি চুয়াডাঙ্গার ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে পড়ি। দশম শ্রেণিতে, বিজ্ঞান বিভাগে। সম্প্রতি মা, খালা এবং মামারা আমার বিয়ের জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন। পড়াশোনার জন্য আমার মা এক বছর আগে আমাকে উৎসাহ দিতেন, এখন তিনি বিয়ে দেওয়ার জন্য ব্যস্ত।

অভাবের কারণে বিয়ে দেওয়াটাই সমাধান নয়। বরং বাল্যবিয়ের কারণে অনেক মেয়েকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে পড়তে হয়। আমার মামা, খালাদের আর্থিক অবস্থা সচ্ছল। তাঁরা চাইলে আমার পড়াশোনার খরচ চালিয়ে নিতে পারেন।

কিন্তু তাঁদের মতে পড়াশোনা করে কী হবে। বরং বিয়ে করে সংসার করাটাই একটা মেয়ের জন্য জরুরি। আমি তাঁদের কথায় রাজি হইনি। কারণ, আমার বয়স ১৬ বছর।

আমি চাই পড়াশোনা করে সাবলম্বী হতে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে। যে আর্থিক সমস্যায় আমি আজ আছি, পড়াশোনা করে তা কাটিয়ে উঠতে চাই।  যাতে মা-বাবাকে আর অন্যের ওপর নির্ভরশীল হতে না হয়। কিছুদিন ধরে মা আমার বিয়ের কথা বলছিলেন।

কথায় কথায় বিয়ের প্রসঙ্গ টেনে আনতেন। এতে করে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছিলাম না। এমনিতেই অনেক দিন পর স্কুল খুলেছে। সামনে পরীক্ষা। তাই এখন ভালোভাবে পড়াশোনা করা দরকার। কিন্তু মাকে বোঝানো যাচ্ছিল না কিছুতেই। এরই মধ্যে শুনলাম, তাঁরা নাকি আমার জন্য ছেলেও ঠিক করে ফেলেছেন। শুনে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। কিছুদিন আগে আমাদের এলাকায় এক মেয়ের বাল্যবিয়ে ঠেকিয়ে দিয়েছিল পুলিশ। আমিও ঠিক করলাম তাদের সাহায্য নেব। শেষমেশ ২৮ সেপ্টেম্বর সকালে সাহস করে থানায় গেলাম। চুয়াডাঙ্গা থানার ওসিকে সব খুলে বললাম। তিনি দুজন পুলিশকে নিয়ে আমাদের বাড়ি গেলেন। মা বাড়িতে ছিলেন না। পরে মা যেখানে কাজ করেন সেখানে গেলেন। বাবার সঙ্গে কথা বললেন। মাকেও বোঝালেন। তিনি যাতে আমাকে বিয়ে না দেন সে বিষয়ে নিশ্চিত করলেন। বাল্যবিয়ে নামের সামাজিক সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য থানায় গিয়েছিলাম। আমার মতে, প্রত্যেক মেয়ের উচিত তার অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হওয়া। আজও আমাদের দেশে হাজারো মেয়ে বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছে। বিয়ের পর অল্প বয়সে গর্ভধারণ করার ফলে তারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এক পর্যায়ে মারাও যাচ্ছে। বাল্যবিয়ের ফলে তাদের নির্ভর করতে হয় স্বামীর ওপর। ফলে স্বামী মর্যাদা দেওয়ার পরিবর্তে তাদের ছোট করে দেখে। বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য চাপও সৃষ্টি করে। ফলে বাল্যবিয়ে থেকে সৃষ্টি হয় যৌতুক প্রথা। আমাদের সবার উচিত এই সামাজিক সমস্যা থেকে দূরে থাকা। বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে এখন অনেক সংগঠন আছে। তোমাদের কেউ আমার মতো পরিস্থিতির শিকার হলে সেই সব সংগঠনেরও সাহায্য নিতে পারো।

Scroll to Top