ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪

রবার্ট মোরেলের কুঠিবাড়ি

সুদূর ইংল্যান্ড থেকে ভাগ্যান্বেষণে এসেছিল মোরেল পরিবার। মিস্টার মোরেল অর্থাৎ সিনিয়র মোরেল ছিলেন পরিবারের কর্তা। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাগেরহাট অঞ্চলের প্রতিনিধি ছিলেন তিনি। আজ যেটা মোরেলগঞ্জ, বাগেরহাটের এই উপজেলার নামও কিন্তু মোরেলের নামানুসারে।

রবার্ট মোরেলের কুঠিবাড়ির প্রাচীন ভবনটি এখন অরক্ষিত। চুরি হচ্ছে ভবনের মালামাল। বেদখল হয়ে গেছে অনেক জমি।

তার আগে জেনে নেয়া যাক রবার্ট মোরেল আর তার পরিবার সম্পর্কে। সিনিয়র মি. মোরেল পরিবার নিয়ে ভারতবর্ষে এসেছিলেন। ১৮৪৯ সালে মি. মোরেলের মৃত্যু হয়। তার স্ত্রী মিসেস মোরেল দুই ছেলে রবার্ট মোরেল ও হেনরি মোরেলকে নিয়ে বসতি স্থাপন করেন পানগুছি নদীর পশ্চিম পাড়ে। সুন্দরবন বন্দবস্ত নিয়ে শুরু করেন নীল চাষ। বাগেরহাট তখন মহকুমাও হয়নি।

খুলনাও ছিল তখন যশোর জেলার অন্তর্গত। এর বড় অংশ জুড়ে ছিল সুন্দরবন। মিসেস মোরেল বরিশাল থেকে শ্রমিক এনে বনজঙ্গল পরিস্কার করে গড়ে তোলেন বিশাল আবাসস্থল ‘কুঠিবাড়ি। এলাকার নাম হয় মোরেলগঞ্জ।
গল্পের এখানেই শেষ নয়। ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহ শুরু হয়। বিদ্রোহ দমনে ইংরেজ শাসকদের অন্যতম পদক্ষেপ কুঠিভিত্তিক শাসনব্যবস্থা।

কুঠিবাড়ির তলদেশে নির্মিত হয় অশ্বশালা। গোপন সুড়ঙ্গসিঁড়ি দিয়ে নামা যেত অশ্বশালায়। কুঠিবাড়ির ভেতরে নাচঘর, গুদামঘর, নির্যাতন কক্ষ ও লাঠিয়াল বাহিনীর কক্ষ, মূল এই ভবনের পাশে ছিল কাচারিঘরসহ আরও অনেক ঘর।

সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বন্য প্রাণীর হাত থেকে সুরক্ষায় কুঠিবাড়ির চতুর্দিকে উঁচু প্রাচীর নির্মাণ করা হয়।

ওই সময় মূল শাসকের দায়িত্ব পালন করেন রবার্ট মোরেল। তার নাম লেখা হতো ‘দ্বিতীয় এডমন্টন রয়েল মিডেলশেক্স মিলিশিয়া রাইফল, অর্থাৎ পল্টনের কাপ্তান রবার্ট মোরেল।

১৮৬৮ সালের ১৩ মে বরিশালে রবার্ট মোরেল মারা যান। এরপরে আর বেশিদিন টেকেনি মোরেল পরিবারের শাসন। মোরেলগঞ্জ থেকে ১৮৭৮ সালে শাসন গুটাতে হয় তাদের। তবে কালের সাক্ষী হয়ে এখনো রয়ে গেছে সেই ‘কুঠিবাড়ির ধ্বংসাবশেষ।
মোরেল পরিবারের বিদায়ের শেষ দিকে মোরেলের ভক্ত ও অনুসারীরা কুঠিবাড়ির অদূরে নির্মাণ করেন মোরেলের স্মৃতিস্তম্ভ। শ্বেতপাথরের স্মৃতিফলকে এখনো অমলিন রবার্ট মোরেলের নাম।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নেই, নেই ব্রিটিশ শাসন। তবে, কালের সাক্ষী হয়ে আছে মোরেল পরিবারের স্মৃতিবিজড়িত রবার্ট মোরেলের কুঠিবাড়ি। কতো মানুষের, হাসি-কান্না, হাহাকার মিশে আছে ইট কাঠে।

এম. পলাশ শরীফ, টিম রুটস, মোরেলগঞ্জ
Scroll to Top