ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪

ডাফলাই বেদে পল্লীতে একদিন

বেদে জীবন নিয়ে রচিত বাংলা সাহিত্যের অনেক চরিত্র কিংবদন্তি হয়ে আছে। বেদেদের নিয়ে কত গল্প, কত লোকগাঁথা!

কতটুকু জানি সেই বেদে জীবন সম্পর্কে? জীবিকার তাগিদে বেদেরা বহর নিয়ে ঘুরে বেড়ায় এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে।

কখনো আস্তানা গাড়ে নদীর কোন বাঁকে। আশেপাশের জনপদে সাপ খেলা দেখায়, সাপ ধরে। তাবিজ-কবজ, ঝাড়ফুক, তুকতাক। হাত সাফাইসহ নানা রকম খেলা দেখায়, আনন্দ দেয় গ্রামের মানুষকে । এই তাদের জীবন, তাদের জীবিকা।

নৌকায় ঘর, নৌকায় সংসার। জন্ম-মৃত্যুও নৌকায়। এইতো বেদে জীবন! সময় বদলেছে, বেদে জীবনেও এসেছে পরিবর্তন। এখন অনেকেই ডাঙ্গায় বসতি গড়ে তুলছে। স্থায়ী বসতি।

শেরপুরের ঝিনাইগাতী। সবুজ ফসলের মাঠ ছাড়িয়ে গাছপালায় ঘেরা গ্রাম, নাম ডেফলাই। গ্রামের শেষ সীমানায় ব্যাঙখালী খাল। এই খালের দু্ই পাড়ে বসতি গড়ে তুলেছেন বেদেরা।

আঁকাবাঁকা কাঁচামাটির পথ, কিছুটা সামনে গেলেই, বেদে পল্লী। কাঁচা পথে হেটে চলেছেন নারীরা। দেখেই চেনা যায় এরা বেদে নারী।

গাছের ছায়ায় অবাধে খেলা করছে কিশোর-কিশোরী, ছোটছোট ছেলেমেয়ে। বলে দিতে হয়না, এটা বেদে পল্লী।

একযুগ আগের কথা। শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ডেফলাই গ্রামে ৬ একর জমি কিনে স্থায়ী আবাস গড়ে তোলে বেদে সম্প্রদায়ের ১১৪টি পরিবার। এখন লোক সংখ্যা ৬৩৩ জন। ভোটার চার শ’রও বেশি।

কুমিল্লা, সুনামগঞ্জ, নোয়াখালী, সাভারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছে এই বেদেরা। পলিথিনে মোড়া ঝুপরি ঘরগুলো মনে করিয়ে দেয় তাদের যাযাবর জীবনের কথা।

বেদে পরিবারে নারীর ভূমিকাই যেন প্রধান। আয় রোজগার, কাজকর্ম, জীবনজীবিকা, সর্বত্র নারীদের অংশগ্রহণ। চলনে বলনে, বেশভূষায়, এমনকি আচার আচরণেও আলাদা বেদে নারীরা।

ওই যে ডাগর চোখের কিশোরী, সুদূরে তাকিয়ে। কী ভাবছে সে? ডাগর চোখে কী তার ভবিষ্যৎ জীবনের স্বপ্ন? (ভিডিও স্টোরি থেকে ছবি দিতে পারলে এই বাক্যগুলো যাবে, ছবি দিতে না পারলে ফেলে দিতে হবে।)

আর, পানের রসে ঠোট রাঙানো বালিকাটি? জীবন সম্পর্কে কী সময়ের আগেই জেনে গেছে সব? যেমন জেনে যায় অন্য বেদে নারীরা। (ভিডিও স্টোরি থেকে ছবি দিতে পারলে এই বাক্যগুলো যাবে, ছবি দিতে না পারলে ফেলে দিতে হবে।)

সাপখেলা এখন কমই দেখা যায়। (সাপখেলার ছবি)

আগের মতো তাবিজ-কবজ, মাদুলিও কেনে না কেউ। অভাব অনটন তাদের নিত্যসঙ্গি। কোনো নাগরিক সুবিধা নেই বেদেপল্লীতে। পানীয় জলের সংকটতো আছেই।

বেদে শিশুরা বেড়ে ওঠে প্রকৃতির নিয়মে, হেসে খেলে। শিক্ষায়ও পিছিয়ে তারা। সমস্যা সমাধানে বেদেদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।

নাঈম ইসলাম, টিম রুটস, শেরপুর
Scroll to Top