পঞ্চগড়ের শিলাইকুটি। শিলাইকুটি তেঁতুলিয়া উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী জনপদ। গ্রামবাংলার আর দশটা প্রত্যন্ত জনপদের যে চিত্র, তার সবই আছে এই জনপদে।
পঞ্চগড় জেলা সদর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে শিলাইকুটি। যোগাযোগের তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ, পায়ে হাটা কাঁচা রাস্তা। এলাকার মানুষের প্রধান পেশা কৃষি।
ব্যতিক্রম একটাই, গ্রামের শেষ প্রান্তের বাজারটি। এই বাজারকে কেন্দ্র করে সপ্তাহের প্রতি শুক্র ও সোমবার সীমান্ত এলাকার এই গ্রামের দৃশ্য পাল্টে যায়।
যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে গ্রামটি। প্রাণচাঞ্চল্য দেখা যায় গ্রামের মানুষের মধ্যে। সপ্তাহের এই দুইদিন যে শিলাইকুটির হাটবার। এলাকার মানুষ অপেক্ষায় থাকে এই হাটবারের।
তারা কেনাবেচা করে তাদের কৃষিপন্য, জমিতে উৎপাদিত শাকসবজি। পরিবারের নিত্যপণ্যের কেনাকাটা, তাও এই হাটে। টুকিটাকি সবই পাওয়া যায়। এমনকি, প্রাথমিক চিকিৎসার ওষুধপত্রও মেলে।
দুই একটা চায়ের দোকান, এমনকি জিলিপি-মিষ্টিও তৈরি হয়। হাটুরেরাতো বটেই, গ্রামের মানুষও চায়ের আড্ডায় মাতেন।
বাজার বলতে আমাদের সামনে যে চিত্র ভেসে আসে তার ব্যতিক্রম শিলাইকুটি। হাটের প্রায় সব দোকানই অস্থায়ী। হাটবারে পলিথিন বা কাপড়ের ছাউনি দিয়ে দোকান সাজায়।
দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। হাটে আসে এলাকার উৎপাদিত টাটকা সাক-সবজি। রবিউল ইসলামের মুদি দোকানে চাল-ডাল, লবণ-মরিচ, তেল-মসলা সবই পাওয়া যায়।
মাটির ভিটির অস্থায়ী দোকান হলেও সাইফুল হোসেনের দোকানেও মেলে সব ধরণের নিত্যপন্য। এলাকার মানুষের মসলার যোগান দেন আজিমুল।
রয়েছে আরও নানা দোকান। জুতা, সান্ডেল, সাজগোজের জিনিসপত্র, খেলনা সবই মেলে।
এলাকার আল আমিন হোসেন প্রতি হাটেই সওদা করেন এই হাটে। আব্দুস সাত্তারের মত হাজারো মানুষ নিয়মিত কেনাকাটা করেন এখানে।
আছে নরসুন্দর ইউসুফ আলীর সেলুন। প্রতি হাটবারে টুল পেতে বসে খৌরকর্ম করেন। ভালই আয় রোজগার হয় তার।
প্রতি হাটে তিনি তার ওষুধের দোকান সাজিয়ে বসেন পল্লীচিকিৎসক সলেমান আলী । শিলাইকুটির মিনি ডাক্তারখানা। এখানকার মানুষের ভরসা সোলায়মান ডাক্তারের এই অস্থায়ী ডিসপেন্সারি।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারাতে বসেছে গ্রামের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে থাকা এসব হাটবাজার। তারপরও টিকে আছে শিলাইকুটি হাটের ঐতিহ্য। এখনো মাটিতে চাটাই বিছিয়ে খোলা দোকানে চলে বেচাকেনা। অস্থায়ী সব দোকান। এলাকার মানুষের কোন আক্ষেপ নেই। বরং এ হাট নিয়ে গর্ব তাদের।