ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪

যে গ্রামে মানুষের বসতি নেই

গ্রাম আছে, গ্রামে মানুষের বসতি নেই! এমন কথা কী আগে কখনো শুনেছেন? পঞ্চগড়ের চান্দাপাড়াএমন এক গ্রাম, যেখানে এখন কোন বাড়িঘর নেই, নেই মানুষের কোলাহল।

অথচ কিছুদিন আগেও গ্রামটিতে বংশানুক্রমে সুখে-শান্তিতে বসবাস করতো অনেকে। মসজিদে আজান হতো। নামাজ আদায় করতো একসাথে। বাজার ছিল। হাটবারে বেচা-কেনা করতে আসতো অন্য গ্রামের মানুষও।

এখন সবই স্মৃতি। কোন বাড়িঘর নেই, নেই মানুষের বসতি। কেবল স্মৃতিচিহ্ন হয়ে আছে গ্রামের একমাত্র পরিত্যক্ত মসজিদটি।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার গড়িনাবাড়ি সীমান্ত ঘেষা গ্রাম চান্দাপাড়া। দেশ বিভাগের সময় গ্রামে লোকজন কমে যায়। তারপর টিকে ছিল ৭০/৮০ টি পরিবার।

আশির দশক পর্যন্ত সুখেমান্তিতেই বসবাস করতো চান্দাপাড়া গ্রামের মানুষ। গ্রামে মসজিদ ছিল, ছিল একটি বাজারও। গ্রামের মানুষ নাম দিয়েছিল জয়বাংলা বাজার।

গ্রামের পাতকুয়ায় দলবেধে পানি নিতে আসতো গ্রামের বধূরা। এসবই এখন অতীত।
নব্বইয়ের দশকে এসে গ্রামে অপরাধ বেড়ে যায়। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই হয়ে ওঠে নিত্যদিনের ঘটনা।

চোর-ডাকাতরা দিনে দুপুরে মানুষের বাড়িঘরে হানা দিতে শুরু করে। নানা রকম হয়রানি, নির্যাতনের শিকার হয় গ্রামের সাধারণ মানুষ। একাধিক হত্যাকাণ্ড ঘটে ছোট্ট এই গ্রামে।

আতঙ্কের জনপদ হয়ে ওঠে চান্দাপাড়া গ্রাম। এজন্য ভারতীয় নাগরিকদের দায়ি করেন গ্রামের পুরনো বাসিন্দারা। কাটাতারের বেড়া না থাকাও অপরাধ বেড়ে যাওয়ার কারণ মনে করেন অনেকে।

ভয়ে, আতঙ্কে ২০০০ সালের দিকে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান গ্রামের বাসিন্দারা। আশেপাশের গ্রামে বসতি গড়ে তোলে।

এখস বসত ভিটার কোনটি পরিত্যক্ত, আবার কোনটি আবাদি জমি। গ্রামে কালেভদ্রে মানুষের দেখা মেলে। চাষবাস, বা গরু-ছাগল চরাতে মাঝেমধ্যে আসেন কেউ কেউ।
স্মৃতি হাতড়াতেও আসেন কেউ কেউ।

কিছু বাঁশঝাড়, গাছপালা, আর শতবর্ষী গ্রামের পরিত্যক্ত মসজিদটি সাক্ষী হয়ে আছে মনুষ্যবসতির।

ইমরান হোসেন রাজু, টিম রুটস, পঞ্চগড়
Scroll to Top