ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার রাঙ্গাটুঙ্গি গ্রাম। ঠাকুরগাঁও শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার পথ। রাঙ্গাটুঙ্গি গ্রামের নাম হয়তো আমাদের অনেকেরই জানা।
দলবেধে প্র্যাকটিস করছে গ্রামের ফুটবলাররা। তবে এই ফুটবলারদের সবাই নারী।
বড়দের সাথে রয়েছে ক্ষুদে ফুটবলাররাও। এই মেয়েরাই গ্রামটিকে পরিচিত করে তুলেছে। গত কয়েক বছরে গ্রামের চিত্রই পাল্টে গেছে। তবে, এ অবস্থা কিন্তু একদিনে হয়নি। নানা রকম সামাজিক বাধা, দারিদ্র্য, মানুষের কটুক্তি-সব প্রতিবন্ধকতা পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে নিভৃতপল্লীর মেয়েরা। এখানকার ৬ জন মেয়ে এখন জাতীয় দলে।
ভোর ৬ টা থেকে মাঠে হাজির গ্রামের মেয়েরা।সকাল ৮ টা পর্যন্ত চলে অনুশীলন। আবার বিকেল ৪ টা থেকে ৬ টা। রাঙ্গাটুঙ্গি মাঠে এ দৃশ্য প্রতিদিনের। গ্রামের মেয়েরা হাফপ্যান্ট আর জার্সি গায়ে ফুটবল খেলছে- এটা দেখতে মোটেই অভ্যস্ত ছিল না মানুষ। আজ সেই চোখগুলোতে উচ্ছ্বাস।
তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন এসেছে। বরং মেয়েদের উৎসাহিত করছে মাঠে যেতে। জাতীয় দলে এখন রাঙ্গাটুঙ্গির ৫ জন নারী ফুটবলার।। অনূর্ধ্ব-১৬ দলে সোহাগী কিসকু ও মুন্নী আক্তার আদূরী মিয়ানমারে বাংলাদেশের হয়ে খেলেছে।
আর অনূর্র্ধ্ব ১৫ দলে বিথীকা কিসকু, কোহাতী কিসকু, কাকলী আক্তার নিয়মিত অনুশীলন করছে। আর এসবের পেছনে রয়েছেন ক্রীড়া সংগঠক অধ্যক্ষ তাজুল ইসলাম। এই ক্যারিসমাটিক সংগঠক দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়েদের নিয়ে জেলা শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে অজপাড়াগাঁয়ে গড়ে তুলেছেন রাঙ্গাটুঙ্গি মহিলা ফুটবল একাডেমি।
২০১৪ সাল। রাণীশংকৈল রাঙ্গাটুঙ্গি এলাকার মাঠে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ। তাজুল ইসলামও খেলা দেখছিলেন। দর্শক সারিতে চোখ আটকে যায়। তাজ্জব কাণ্ড! অবাক হয়ে দেখেন, মাঠের বেশির ভাগ দর্শকই নারী। আর মাঠের পাশেই কয়েকজন মেয়ে ফুটবল নিয়ে খেলছে!
তাজুল ইসলাম তখন ওই মেয়েদের ডেকে খেলার কথা বলেন। পরেরদিন তাদের মাঠে আসতে বলেন। প্রথম দিন ৫ জন আসে, তারপর একে একে বাড়তে থাকে। এখন তার দলে ৪০ থেকে ৫০ জন মেয়ে নিয়মিত খেলে।
ফুটবল ফেডারেশন থেকে রাঙ্গাটুঙ্গির ২ জন খেলোয়াড় ১০ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান পেয়েছে। সেই টাকায় তাদের দরিদ্র পরিবার ঘরবাড়ি নির্মাণ করেছে, জমি কিনেছে। তাদের দেখে আগ্রহী হয়েছে এলাকার আরও অনেক মেয়ে।
অধ্যক্ষ তাজুল ইসলামের অনুপ্রেরণায় রাঙ্গাটুঙ্গির মেয়েদের ২০১৪ সাল থেকে ফুটবল খেলার যাত্রা শুরু। এখানকার মেয়েরা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টে জেলায় কয়েকবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
পরে রংপুর বিভাগ চ্যাম্পিয়ন, জাতীয় পর্যায়ে দুইবার রানার্সআপ হয়েছে। খেলছে জাতীয় দলে।