মানুষের জানমাল ও ক্ষেতের ফসল রক্ষার চেষ্টা। হাতির বেঁচে থাকার জন্য খাবারের অনুসন্ধান। দু’পক্ষেরই বেঁচে থাকার লড়াই।
এভাবেই বছরের পর বছর বন্য হাতির সাথে যুদ্ধ করে টিকে আছে শেরপুরের সীমান্ত অঞ্চলের মানুষ। উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় গারো পাহাড়ের সীমান্ত অঞ্চলের মানুষ আতঙ্কে আছেন।
মাঝে মধ্যেই, লোকালয়ে হানা দেয় বন্যহাতির পাল। প্রায়ই পাহাড়ি উঁচু টিলা থেকে হাতির দল নেমে আসে। খেয়ে সাবার করে দেয় ক্ষেতের ধান, তছনছ করে শাক-সবজি, গাছপালা। প্রতিহত করতে গিয়ে প্রাণহানিও ঘটে। হাতিও মারা যায়।
মাঝে মধ্যেই দলবেঁধে পাহাড় থেকে নেমে আসে হাতি। সাবার করে দেয় কৃষকের ক্ষেতের ধান, কষ্টে ফলানো ফসল। যত না খায়, তার চেয়ে নষ্ট করে বেশি।
শেরপুরের ঝিনাইগাতির সীমান্ত এলাকায় এই জায়গাগুলো এক সময় হাতির যাতায়াতের পথ ছিলো। তীব্র রৌদ সহ্য হয়না হাতির। তাইতো রোদ পড়ে গেলে নেমে আসে লোকালয়ে।
শেরপুরের শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তজুড়েই বন্যহাতির তাণ্ডব।
কী করবে হাতি! তাদেরও যে খাবার দরকার, বেঁচে থাকতে হবে তাকেও। তাই বাধ্য হয়ে আধা-পাঁকা ধান কাটেন কৃষক।
শুধু ফসল বাঁচানোই নয়, ক্ষুধার্ত বুনো হাতির দলকে ঠেকাতে নানা রকম চেষ্টা মানুষের। পরিবেশবাদীরা বলছেন, একটা সময় এই গারো পাহাড় গহীণ অরণ্য ছিলো।
হাতিসহ বিভিন্ন প্রাণী অবাধে চলাচল করতো পাহাড়ে। ধীরে ধীরে পাহাড় দখল করে মানুষ। বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যায়। এতে আবাসন ও খাদ্য সংকটে পড়ে বুনো হাতি। বেঁচে থাকার জন্যই হাতি আর মানুষের এই সংঘাত।
হাতির উপদ্রপে বিপাকে পড়েছেন সীমান্তবর্তী এলাকার কৃষকরা৷ হাতি নামলে ধান খেয়ে সাবার করে ফেলবে, ভয়ে কাঁচাপাকা ধান কেটে ঘরে তোলেন তারা।
শেরপুরের পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের সদস্য সচিব সাবিহা জামান শাপলা। তিনি জানান, গারো পাহাড়ে বন্য হাতি আর মানুষের এ লড়াই যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। হাতি তার নিজ জায়গাতেই আছে, কিন্তু মানুষ ঢুকে যাচ্ছে হাতির জায়গায়। এভাবেই হাতি আর মানুষের দ্বন্দ্ব।
গারো পাহাড় শেরপুর জেলার ঐতিহ্য। আর হাতি পাহাড়ের অলংকার। হাতি তার নিজস্ব ভূমিতেই আছে। মানুষই অনুপ্রবেশ করেছে হাতির ভূমিতে- স্পষ্ট করে জানান সবুজ আন্দোলনের কর্মী মেরাজ উদ্দিন।
২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত সরকারি হিসাবে শুধু শেরপুরেই ২৫টি হাতির মৃত্যু হয়েছে।