ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেনের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। ট্রেন চালু হওয়ার পর এই রুটে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়া যাবে মাত্র ১৮৮ টাকায়।
এ রেলপথের প্রকল্প পরিচালক মো. সুবক্তগীন জানান, ঢাকা-কক্সবাজার সর্বনিম্ন টিকিট খরচ ১৮৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা সর্বোচ্চ ১৭২৫ টাকা পর্যন্ত।
রেলওয়ের বাণিজ্যিক শাখা নিউজবাংলাকে জানিয়েছে, চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে কক্সবাজারের প্রকৃত দূরত্ব ১৫০ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। তবে রেলওয়ের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ১০০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের সেতুর জন্য অতিরিক্ত ভাড়া ও দূরত্ব (পয়েন্ট চার্জ) নির্ধারণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম- কক্সবাজার রুটে সাতটি সেতুর জন্য বাড়তি ৫৪ কিলোমিটারের ভাড়া আরোপ করা হয়েছে। বাড়তি পয়েন্ট চার্জ যুক্ত করে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে বাণিজ্যিক দূরত্ব ২০৫ কিলোমিটার ধরে ভাড়া নির্ধারণ করা হবে। একইসঙ্গে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রামের ৩২১ কিলোমিটারের বাণিজ্যিক দূরত্ব বিবেচনায় ঢাকা-কক্সবাজার পর্যন্ত ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করা হবে।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজারের সর্বমোট ৫৫১ কিলোমিটার বাণিজ্যিক দূরত্ব ধরে ভাড়া নির্ধারণ করা হচ্ছে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, এ পথে নন-এসি অর্থাৎ শোভন চেয়ারে ৫০০ টাকা ও এসি সিটে ৯৫০ টাকা ভাড়া প্রস্তাব করা হয়েছে। এসি সিটে ১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ ভাড়া হবে ১ হাজার ১০০ টাকা। ভ্যাটসহ এসি কেবিনে ১ হাজার ২০০ ও এসি বার্থে ভাড়া পড়বে ১ হাজার ৭২৫ টাকা।
এ বিষয়ে মো. সুবক্তগীন বলেন, ‘আমরা আশা করছি ১ ডিসেম্বর থেকেই যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু করতে পারব। আর সেই ট্রেনে সর্বনিম্ন ভাড়া যেটি ধরা হয়েছে, সেটি হচ্ছে ১৮৮ টাকা। আর এটি নন-এসি মেইল ট্রেন। সর্বোচ্চ ভাড়া এসি বার্থে ১ হাজার ৭২৫ টাকা।’
বর্তমানে রেলের যে ভাড়ার হার আছে, সেই অনুযায়ীই নতুন এ যাত্রপথের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এ রুটে দুটি ট্রেন চালানোর প্রস্তাব থাকলেও, ঢাকা থেকে প্রথমদিকে দিনে একটি আন্তঃনগর ট্রেন চলবে। এ বিষয়ে রেলপথের প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘ভবিষ্যতে এই রুটে পর্যটক কোচ চালু করা হবে। শুধু ঢাকা নয়, উত্তরাঞ্চল ও দেশের অন্যান্য অংশ থেকেও কক্সবাজারে রেলপথে আসা যাবে। এতে যোগাযোগের নতুন পথ উন্মোচিত হবে।’
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল সূত্র জানায়, কক্সবাজারগামী ট্রেনটি ঢাকা থেকে ছাড়বে রাত সাড়ে ১০টায়। সেটি চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছাবে রাত ৩টা ৪০ মিনিটে। ২০ মিনিট পর রাত ৪টায় চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়ে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে কক্সবাজার পৌঁছাবে। ট্রেনটি পুনরায় ঢাকার উদ্দেশে কক্সবাজার স্টেশন থেকে ছেড়ে যাবে দুপুর ১টায়, চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছাবে বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে। এরপর চট্টগ্রাম থেকে বিকেল ৪টায় ছেড়ে রাত ৯টা ৫ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছাবে।
চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোর মধ্যে একটি সকাল ৭টায় চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ছেড়ে ষোলশহর, জানআলী হাট, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, চকরিয়া, ডুলহাজারা ও রামু স্টেশন থেকে যাত্রী ওঠানামা করাবে। এরপর সকাল ১০টা ২০ মিনিটে কক্সবাজারে পৌঁছাবে।
চট্টগ্রাম থেকে আরেকটি ট্রেন বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে ছেড়ে ষোলশহর, জানআলী হাট, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, চকরিয়া, ডুলহাজারা ও রামু স্টেশন থেকে যাত্রী ওঠানামা করাবে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ট্রেনটি কক্সবাজার স্টেশনে পৌঁছাবে।
একইভাবে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে প্রথম ট্রেনটি ছাড়বে সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে। এটি রামু, ডুলহাজারা, চকরিয়া, সাতকানিয়া, দোহাজারী, পটিয়া, জানআলী হাট, ষোলশহর স্টেশন থেকে যাত্রী ওঠানামা করাবে। দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে ট্রেনটি চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছাবে। কক্সবাজার স্টেশন থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে দ্বিতীয় ট্রেনটি ছাড়বে সন্ধ্যা ৭টায়। এটি রামু, ডুলহাজারা, চকরিয়া, সাতকানিয়া, দোহাজারী, পটিয়া, জানআলী হাট, ষোলশহর স্টেশন থেকে যাত্রী ওঠানামা করাবে। রাত ১০টা ৫ মিনিটে চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছাবে।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রথম দিকে সবকটি স্টেশনে থামবে না ট্রেন। স্টেশনগুলোর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর থামবে। এজন্য স্টেশনগুলোতে লোকবল পদায়নের কাজও শুরু হয়েছে।
‘কক্সবাজার রেলপথে ট্রেন চালানোর চাহিদা অনেক’ উল্লেখ করে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী তাপস কুমার দাস বলেন, ‘লোকবল ও ইঞ্জিন সঙ্কটের কারণে কতটি ট্রেন চালানো যাবে, তা বোঝা যাচ্ছে না। ঢাকা থেকে যে ট্রেনটি চলবে, সেটি নতুন। এটিতে ১৮টি বগি থাকবে।’
রেলপথ নির্মাণের আগে কক্সবাজারের সঙ্গে কোনো রেল যোগাযোগ ছিল না। শুরুতে এটি ছিল দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ‘সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ’ প্রকল্প। এতে মোট ১২৯ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কথা ছিল। পরে রামু থেকে ঘুমধুম অংশের কাজ স্থগিত করা হয়। এখন চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।