ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪

ঢাকাই গল্পে কালের আকর হবে ‘গল্পকার’

শৈশবে দাদু-নানুদের মুখে গল্প শোনেনি, এমন কাউকে হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। রূপকথা, ভূত, ডাইনিবুড়ি, ঠাকুরমার ঝুলি আর গোপালভাঁড়; কত শত গল্পই না মুখে মুখে! তার অনেক কিছুই আমাদের মনে গেঁথে আছে। সোনামুখী সুঁচের ডগায় তোলা নকশির কাঁথার মতো।

শৈশব থেকেই গল্পের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক আমাদের। গুছিয়ে বললে, পড়তে শেখার আগে শ্রবণে সাহিত্যের সূচনা। সাহিত্যের সঙ্গে বাঁধন আঁটা সেই থেকে। গল্প ছিল সেই বাঁধনের সুতো। তাই গল্প আর মানবজীবন মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। হৃদয়ে ফেলা জলের দাগ। বড়বেলায় গল্পের কাগজ ‘গল্পকার’সেই ধারাবাহিকায় নতুন পাওয়া।

২০১৫ সালে ‘গল্পকারে’র একটি সংখ্যায় ছাপা হয়েছিল আমার ‘দরিয়ার মানিক’ গল্পটি। সেই থেকে বন্ধন। আজও আছে। গল্পকারের সাথে।

গল্প নিয়ে এমন ছোট কাগজ দ্বিতীয়টি নেই এই শহরে। প্রতিমাসেই প্রকাশ হচ্ছে। লেখক আর পাঠকের মাঝে শক্তপোক্ত একটা সেতু গড়ে দিয়েছে ‘গল্পকার’। দেয়ালের ওপাশে থেকে সেই সেতুর ভিত তিলে তিলে গড়েছেন মুহাম্মদ মহিউদ্দিন। সম্পাদক ও প্রকাশক দুটো পরিচয়ই তার।

প্রথমবার হাতে নেওয়ার পর গল্পের ভিন্ন এই আয়োজনে পুলকিত হয়েছিলাম। এখনো তার রেষ কাটেনি। অর্ধদশকের দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হয়েছে ‘গল্পকার’কে। কিন্তু প্রতিটি সংখ্যাই আলাদা। প্রচ্ছদ থেকে শুরু করে ভেতরের আয়োজন। কোথাও নেই পুরনো ছোঁয়া। নিত্যনতুন লেখক, লেখা আর অনুষঙ্গে ভরপুর। ‘গল্পকার’র প্রচ্ছদের নিজস্বতা এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠিত। এই নিজস্বতা এতটাই প্রখর যে, দূর থেকে দেখলেও বলে দেওয়া যায়, পত্রিকাটি ‘গল্পকারই’ হবে।

বলতে দ্বিধা নেই, ‘গল্পকার’ শুধু ঋদ্ধজনই নয়, প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ লেখকদের আশ্রয়। খড়িমাটি হাতে নেওয়া অনেক নবীণের হাত পেকেছে এখানটায় লিখে। লেখক নির্বাচনে গল্পকারের দূরদর্শিতা প্রশংসাতীত। ‘গল্পকার’ যাদের প্রথম গল্প ছেপেছে, তাদের কেউ হারিয়ে গেছেন, এমনটা নজির নেই।

শুধু স্বদেশী ভাষাই নয়, ভিনদেশি ভাষার লেখকদেরও ‘গল্পকার’ তুলে আনছে স্বদেশী ভাষায়। যা বিদেশি সাহিত্য পিপাসুদের মন পেয়েছে। নিয়মিত এই আয়োজন সাহিত্যের অন্য কাগজগুলোতে নেই বললেই চলে।

বিজ্ঞানের দানে সময় এখন তথ্য-প্রযুক্তি নামের ঘোড়া পিঠে সওয়ার হয়েছে। সময়ের সঙ্গে তার এগিয়ে যাওয়ার গতি কল্পনাতীত। প্রযুক্তি মানুষের সামনে দুয়ার খুলেছে ভার্চুয়াল জগতের। ছাপা অক্ষরে পাঠ কমে যাচ্ছে, প্রায়ই শোনা যায় সে কথা। কিন্তু বইয়ের পাঠকও তো হারিয়ে যায়নি। ভালো বই কখনোই পাঠকের সঙ্গ হারাবে না। এটাই সত্য।

ভার্চুয়াল এই সময়ে গল্পকারের যাত্রাটাও সহজ নয়। অনেক প্রতিকূলতা। ভার্চুয়াল আর অ্যাকচুয়ালের লড়াই। আশার কথা হচ্ছে, এত এত মাধ্যমের ভিড়ে গল্পকারের পাঠকও দিন দিন বাড়ছে। গল্পকার পাঠকের চাওয়া মেটাতে পারছে বলে। ঢাকাই গল্পে কালের আকর হয়ে থাকবে ‘গল্পকার’। নির্দ্বিধায় বলা যায়।

Scroll to Top